মোঃ নাসিম, নাচোল প্রতিনিধি:- চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার বর্তমান সময়ে দুর্গম ও চরম অবহেলিত শব্দলপুর গ্রাম। এই অঞ্চলের গরীব ও ঝড়েপড়া সন্তানদের ইসলামী শিক্ষায় দীক্ষিত করার লক্ষ্যে ১৯৮০ সালে ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা হয় শব্দলপুর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা। এর পর খেয়ে না খেয়ে শিক্ষকরা চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীদের পাঠদান। ওই মাদ্রাসাটির দুর্দশার খবর কারঁও অজানা নয়। প্রতিষ্ঠার একদশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো মাদ্রাসাটিতে আধুনিকতার কোন ছোঁয়াই স্পর্শ করেনি। সরকার যেখানে অবহেলিত (মাদ্রাসা শিক্ষা) ইসলামী শিক্ষার প্রসার ঘটানো ও ইসলাম শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করার লক্ষ্যে দেশের ইসলামী প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসাগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়ন থেকে শুরু করে সার্বিক উন্নয়নের জন্য নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন অথচ অবহেলিত এলাকার এই ইসলামী বিদ্যাপিঠটি এখনো অবহেলিত ও অনেক পিছিয়ে রয়েছে। মাদ্রাসাটিতে কক্ষ সংকটের কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিত্যক্ত একাধিক ঝুঁকিপূর্ন কক্ষে গাদাগাদি করে পাঠগ্রহণ করছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও কোন নিরাপত্তা প্রাচীর না থাকায় মাদ্রাসার সব কিছুই থাকে নিরাপত্তাহীনতায়। টিনের ছাউনির কোথাও আবার টিন উড়ে ফাঁকা হয়ে গেছে আর দীর্ঘদিনের পুরাতন টিনগুলোতে রয়েছে অসংখ্য ফুটো। যার কারণে বর্ষা মৌসুমে টিনের ছাউনির কক্ষগুলোতে পাঠদান করানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। টিনের ফুটো দিয়ে কক্ষগুলোতে বৃষ্টির পানি পড়ে জমা হয় হাটু পানি। বর্ষা মৌসুমের অধিকাংশ সময় ঝুঁকিপূর্ণ বারান্দায় কিংবা গাছের নিচে মাদ্রাসায় পাঠদান দিতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ। পরিত্যক্ত এই ভবনগুলো যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহল। পর্যাপ্ত শ্রেণি কক্ষ না থাকার কারণে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত কক্ষেই পাঠদান করাতে বাধ্য হচ্ছেন।
মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মো:এনামুল হক জানান, সরকারের নীতিমালা অনুসারে দেশের প্রতিটি উপজেলায় ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠান থাকার কথা রয়েছে। অথচ আমাদের এই ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো মিলেনি সরকারি ভাবে কোন উন্নয়নের ছোঁয়া। বেহাল দশায় পড়ে আছে এই ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। কারো নজর নেই মাদ্রাসাটির দিকে। আমাদের ভাগ্যে মিলেনি আধুনিক মানের কোন সরকারি ভবন ও সুযোগ-সুবিধার। এই মাদ্রাসার বর্তমান যা রয়েছে তা সবই দাতা ব্যক্তি ও আমাদের দ্বারা সৃষ্টি। মাদ্রাসাটি স্থাপনের সময় দাতা ব্যক্তি ও শিক্ষকদের ব্যক্তিগত অর্থায়নে টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি করা হয় ৫ টি কক্ষ। মাদ্রাসাটিতে বর্তমানে এলাকার অসহায়, গরীব ও খেটে-খাওয়া পরিবারের প্রায় ২ শতাধিক ছেলে-মেয়েরা ইসলাম শিক্ষা গ্রহণ করছে। মাদ্রাসাটি অনেকটা স্বেচ্ছাশ্রম ভিত্তিক ইসলাম শিক্ষা ছড়িয়ে দিয়ে আসছে এই অঞ্চলের সন্তানদের মাঝে। মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত ও এমপিও ভুক্ত হয়নি। মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সজিব ইসলাম, কুলসুম আক্তারসহ অনেকেই জানায়, আমরা এই মাদ্রাসার অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা গরীব, অসহায় ও খেটেখাওয়া পরিবারের সন্তন। অনেক টাকা খরচ করে নামীদামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর মতো সামর্থ আমাদের পরিবারের নেই। তাই আমরা এই মাদ্রাসায় ইসলামী শিক্ষা গ্রহণ করছি। আমরা কক্ষের অভাবে পরিত্যক্ত ঝুঁকিপূর্ন কক্ষেই গাদাগাদি করে পাঠ গ্রহণ করছি। এছাড়াও মাদ্রাসার নিরাপত্তা প্রাচীর নেই, মেয়েদের জন্য নেই কমন ও ওয়াশ রুম নেই। যার কারণে আমরা গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়তই যুগোপযুগি ইসলামী শিক্ষার অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমরা সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে পাঠ গ্রহণ করতে পারছি না।
মাদ্রাসার সভাপতি জহির উদ্দীন মাস্টার জানান, ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাটি সরকারি সাহায্য সহযোগিতা ছাড়াই স্থানীয় জনসাধারণ, শিক্ষকদের আর্থিক সহযোগিতায় কোনরকমে চলছিলো। সম্প্রতি স্থানীয়দের সাহায্যে পাঁচ কক্ষ বিশিষ্ট পুরাতন টিন দিয়ে নতুন ঘর নির্মান করা হয়েছে। সম্প্রতি উপজেলা চেয়ারম্যানের দেয়া নতুন ১০ জোড়া বেঞ্চ পেয়ে শিক্ষার্থীরা খুশি। মাদ্রাসার প্রায় ১৪৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য আরও ২০জোড়া বেঞ্চ প্রয়োজন।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা দুলাল উদ্দিন খান জানান,মাদ্রাসাটির কথা শুনেছি।সরোজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে নাচোল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের জানান,গত ১৫ দিন পূর্বে আমি ও ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বাবু মাদ্রাসাটি পরিদর্শন করেছি। শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ জোড়া বেঞ্চ প্রদান করেছি। আগামী অর্থবছরে উপজেলা পরিষদের ফান্ড থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।
Leave a Reply